জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। তবে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবগুলো বাঁধ ভেঙ্গে ইতোমধ্যে বানের জলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে জেলার পাঁচ উপজেলাসহ গাইবান্ধা পৌরসভা। পৌরসভার প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি পৌরবাসী। এজন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষন, তদারকি ও সংস্কার না করায় জেলার সবগুলো বাঁধ ভেঙ্গে যাবার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা। ১৯৮৮ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাকে ছাড়িয়ে এবারের বন্যাকে মহাপ্লাবন বলে আখ্যায়িত করছেন গাইবান্ধার বানভাসী মানুষ।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সাদুল্লাপুর উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ ২৫৩টি গ্রামের ১ লাখ ৪ হাজার ৩৪০টি পরিবারের অন্তত ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ১৪২টি। বন্যা কবলিত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছে ৭১ হাজার ২৪ জন। বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট সব ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে কাঁচা রাস্তা ৫১৭ কি.মি., পাকা রাস্তা ১৮৭ কি.মি., ১৮টি কালভার্ট এবং ৫৭.৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৯ হাজার ৮২১ হেক্টর। এছাড়া ২ হাজার ৯৪১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ২ হাজার ৬৪০ টি টিউবওয়েল।
এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ওই ৫ উপজেলায় জেলা ত্রাণ ভান্ডার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার মে. চাল ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬ হাজার কার্টুন শুকনা খাবার। ওইসব সামগ্রী ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের কাজ চলছে। তবে ক্ষতির তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রান সহায়তা দেয়া শুরু করেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত ৫৮৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৯ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৫৫০ কার্টুন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং বাঁধ ধ্বসে গাইবান্ধার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে গাইবান্ধা। সড়কে পানি ওঠায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেইসাথে আশ্রয়, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট, স্যানিটেশনসহ দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসী মানুষের। এদিকে গাইবান্ধার সকল নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি না পেলেও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৪৩ সে.মি., ঘাঘট নদীর পানি শহরের নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৪ সে:মি: উপর দিয়ে বইছে। তবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১ সে:মি: নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।